আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন, গত কিছু দিন ধরে ফেইসবুকে ইনশাল্লাহ নিয়ে একটা প্রচারণা বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। মুসলিমরা সাধারণত কিছু করতে যাওয়ার আগে বলে থাকেন “ইনশাল্লাহ” যার অর্থ “আল্লাহ চাইলে” অথবা “অল্লাহ ইচ্ছে করলে”। কিছু মানুষ হঠাৎ করে এটা প্রচার করতে শুরু করেছে যে শব্দটা যদি এক সাথে লেখা হয় অর্থাৎ ইনশাল্লাহ অথবা Insha Allah অথবা Insh Allah লেখা হয় তাহলে সেটা ঠিক নয়।
ফেইসবুকে স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে এটা তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
স্ট্যাটাসটা অনেকটা এমনঃ
When writing in English We should NOT write it as “InshAllah”.
Because it means: create ALLAH.
Whether Arabic or English please make sure we write it properly as “In shaa ALLAH” (3 separate words), this means “If ALLAH willed”
spread the words around you and to anybody you can.
বারবার বিভিন্ন মানুষের স্ট্যাটাসে এ ধরনের কথা দেখতে পেয়ে আমি বিষয়টার সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে গুগল ট্রান্সলেটরের শরণাপন্না হই। যেহেতু Insha Allah এর অর্থ হচ্ছে create Allah, গুগল ট্রান্সলেটরে তাই আসার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে আমি ইনশাল্লাহ ( إن شاء الله ) পেলাম। [proof] [proof in bangla] এর পর বরং আমি In Sha Allah দিয়ে চেষ্টা করে পেলাম (في شا الله)। এমন কি গুগল ট্রান্সলেটর সাজেস্ট করলো আমি কি Insha Allah চাচ্ছি? ফলে আমার মনে বিষয়টা আরো গভীর ভাবে চেপে বসল।
Insha Allah সম্পর্কে আমার কিছুটা ধারণা আগেই ছিল। আমি সুবিশেষ বিশ্বাসী নই, কিন্তু নিয়মিত বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পড়ার অভ্যেস রয়েছে। এভাবেই পড়তে পড়তে একদিন ইনশাল্লার ইতিহাসটা জানতে পেরেছিলাম।
মোহাম্মদ (সঃ) যখন ধর্মপ্রচার শুরু করেন তখন ইহুদীরা তাদের এক জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে গিয়ে এ বিষয়ে সত্যতা জানতে চায়। তখন সেই ব্যাক্তি ইহুদীদের বলে, “তোমরা মোহাম্মদকে তিনটা প্রশ্ন করো। যদি সে উত্তর দিতে পারে, তাহলে বুঝবে তার কাছে ওহি এসেছে।” ইহুদীরা খুশি হয়ে তিনটা প্রশ্ন নিয়ে মোহাম্মদ (সঃ) এর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো। মোহাম্মদ (সঃ) বললেন আগামী কাল তোমরা এসো, আমি তোমাদের উত্তর বলে দেব। তিনি ভেবেছিলেন আল্লাহ-তো তাঁকে জানিয়ে দেবেন। অতএব চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু তিনি ইহুদীদের আগামী কাল আসতে বলার সময় “আল্লাহ চাইলে” বলেন নি। এরপর প্রতিদিন ইহুদীরা আসে কিন্তু মোহাম্মদ আর কিছু বলতে পারেন না। এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর সুরা কা’হফ (K’ahf)-এর বেশ কিছু আয়াত নাজিল হয় যেখানে তিনটা প্রশ্নের উত্তর ছিল এবং সাথে এটাও বলে দেয়া হয় যেন ভবিষ্যত কালে কিছু বলার সময় অবশ্যই ইনশাল্লাহ বলা হয়। মুসলিমদের মাঝে ইনশাল্লাহর আনুষ্ঠানিক প্রচলন মূলতঃ এখান থেকেই।
যাইহোক, প্রসঙ্গে ফিরে আসার চেষ্টা করছি আবার। Insha Allah অর্থ “God willing”, অর্থাৎ “যদি ঈশ্বর চান”। এটাকে এক সাথে লিখলে আদৌ ভুল হয় কিনা সে বিষয়ে ইসলামিক স্কলার শেখ আছিম আল হাকেমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন,
In Arabic, the words are pronounced insha’ Allah though it is written in sha’ Allah. However, though it is a spelling mistake, it doesn’t mean creating Allah as this is written like this: Inshau Allah. Therefore, I believe that it is OK to write it as a one word in English so that it wouldn’t confuse people to see “in” thinking that “Sha’a” is a vessel that things are put “in”.
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে ইনশাল্লাহ তিন শব্দে গঠিত হলেও উচ্চারণগত দিক দিয়ে এটি দুই শব্দের। তাছাড়া, Insha Allah কোন ভাবেই cteate Allah গঠন করে না বারং In Sha Allah মানুষকে কনফিউজড করে ফেলতে পারে “পাত্রের মধ্যে” প্রকাশ করে।
Islamic Awakenning নামে একটা ফোরাম রয়েছে যেখানে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে পারলাম create Allah হচ্ছে insha’illah অথবা আরবীতে إنشَأِ اللهَ। এটা নিশ্চিত মুসলিমরা কখনওই এভাবে ইনশাল্লাহ লেখে না। অতএব আপনি যদি তিন শব্দে In Sha Allah বা দুই শব্দে Insha Allah বা এক শব্দে Insha’Allah লেখেন, প্রতিবারই সেটা “আল্লাহ চাইলে”কে বোঝাবে, আল্লাহকে সৃষ্টি করা বোঝাবে না।
তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, এটা (ফেইসবুক স্ট্যাটাসটা) প্রচার করলে ক্ষতি কি? ইনশাল্লাহ আরবীতে তিন শব্দের বাক্য, এটাতো মিথ্যে না? নাহ সেটা মিথ্যে না কিন্তু সেটার সাথে যে লেজটা জুড়ে দিচ্ছেন আপনি সেটা সঠিক না। মূল কথা, আপনি যদি এটা করেন, আপনি সত্যের মধ্যে ভুল অথবা (আজকের পর থেকে) মিথ্যাকে মিলিয়ে প্রচার করছেন। আর সেটা ভাষাগত ভুলের থেকেও গুরুতর অপরাধ হবে আপনার ধর্মমতেই!
তথ্যসূত্রঃ
[১] Click This Link
[২] Click This Link
[৩] Click This Link
[৪] Click This Link
[৫] Click This Link
Post a Comment