স্বামী-স্ত্রীর অধিকার

স্বামী-স্ত্রীর অধিকার
স্বামী স্ত্রী এর সম্পর্ক একটি মধুর সম্পর্ক।আল্লাহ এবং রাসূল (সাঃ) এর পরে একজন স্ত্রী এর কাছে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার পাএ তার স্বামী। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই ইসলামে যেভাবে নারীর অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, ঠিক তেমনি স্থান পেয়েছে স্বামীর অধিকারও।

বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।"
সূরা বাকারাঃ আয়াত-২২৩।

হাদিসে এসেছেঃ
"কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।" মুসলিমঃ ইংরেজী অনুবাদঃ ৩৩৬৬।

স্ত্রী স্বামীকে নাম ধরে ডাকতে পারে কি?
স্ত্রীর নিকট স্বামী হ’লেন সবচেয়ে সম্মানের পাত্র। অতএব যেভাবে ডাকলে স্বামী খুশি হবেন সেভাবে ডাকা উচিৎ। তবে স্বামী অসন্তুষ্ট না হলে স্ত্রী স্বামীর নাম ধরে ডাকতে পারে। যেমন যয়নব রাসূল (সাঃ) এর সামনে তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর নাম ধরে কথা বলেছিলেন(বুখারী-১৪৬২)। তবে নাম ধরে না ডাকাই উত্তম কারন সে বয়সে বড় তাই বড় কে বড় মেনে চলা।

যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমানঃ

১) দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ "তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে বা ভাল আচরণ কর।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১৮।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।’ ইবনে মাজাহঃ ১৯৬৭।

২) পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা।এর জন্য আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামী স্ত্রী প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন যাপনেরও অংশ।

ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) বলেছেনঃ ‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’ তবে, পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।

৩) বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা।সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
'কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।' মুসলিমঃ ২৫৯৭।

৪) পরস্পর শুভ কামনা করা, সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া।আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার। দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা উভয়েরই কর্তব্য।আর এর অন্তরভূক্ত হচ্ছে, পরস্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা ।সন্তানদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের সহযোগী।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।" সূরা মায়েদাঃ আয়াতঃ ৫:২।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যঃ


ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা।

আর এই কর্তব্যের মূল হলো স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব। তার উপর তার স্বামীর অধিকার অনেক বড়, যা তার পিতা-মাতার অধিকারের চেয়েও বেশি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অধিকারের (হকের) পরেই তার অধিকারের শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান। আর এই অধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে এসেছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

“পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন” সূরা আন-নিসা: ৩৪

# ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নাবী ﷺ কে সেজদা করেন। নাবী ﷺ বলেন হে মু‘আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সেজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার সেজদা সাজদাহ করতে। তিরমিযী ১৮৫৩

# নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ 'স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ বুখারীঃ ২৫৪৬।

# উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “নারীদের যে কেউ মারা যাবে এমতাবস্থায় যে তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

# আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল: কোন নারী সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বললেন ঐ নারীই উত্তম, যে নারী তার স্বামীকে আনন্দ দেয় যখন সে তার দিকে তাকায়; তার আনুগত্য করে, যখন সে নির্দেশ দেয় এবং তার নিজের ও সম্পদের ব্যাপারে সে যা অপছন্দ করে তার বিরুদ্ধাচরণ করে না।” (ইমাম নাসায়ী হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।

# রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দুনিয়াতে কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দিলেই তার ডাগড় চক্ষুবিশিষ্ট হুরী স্ত্রী বলে উঠে: তুমি তাকে কষ্ট দেবে না; আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুক! কারণ, সে তোর নিকট আগন্তুক, অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে।” (ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।

# “যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে; তার (রমযান) মাসের সাওম পালন করবে; তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা কর, সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবশে কর।” (ইমাম আহমদ হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।

# রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর জন্য সাওম (নফল রোযা) পালন করা বৈধ নয়; আর স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না ।” ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।

স্বামীর বাসস্থানে অবস্থান করা।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ "তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না।" সূরা আহযাবঃ আয়াতঃ ৩৩:৩৩।

# রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সাথে একই বিছানায় শোয়ার জন্য আহ্বান করে, আর তার স্ত্রী সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা ঐ মহিলার উপর লা‘নত (অভিশাপ) বর্ষণ করতে থাকে।” (ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।

# নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা।

# স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া। হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমনঃ ভাই বা আত্মীয় স্বজন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ মুসলিমঃ ২১৩৭।

স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল— স্বামীর আনুগত্য ফরজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

'নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।' বুখারীঃ ৪৭৬৯।

# মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেন- তিন ব্যক্তি এমন আছে যাদের নামায ও অন্যান্য কোন এবাদত কবুল হবে না-
ক. এমন ক্রিতদাস যে তার মনিবের নিকট থেকে পালিয়ে যায়।
খ. এমন নারী যার প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট।
গ. এমন ব্যক্তি যে মদ পানে মত্ত থাকে।

যে স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য, তার নামাজ, রোযা, তিলাওয়াত, সদকা মূলত কোন ইবাদতই কবুল হয় না।

নিম্নে স্বামীর জন্য স্ত্রীর করনীয় কিছু কাজ তুলে ধরা হলো।
★ স্বামীর অনুগত্য ও খেদমত করা একজন স্ত্রী এর ওপর ওয়াজিব।
★ আল্লাহ ও রাসূলের পরে স্বামীর অধিকার সবচেয়ে বেশি তাই তাকে সম্মান শ্রদ্ধা ভক্তি খেদমত করা এবং তার কথা মানা শরীয়তের বিরুধী গুলো বাদ দিয়ে।
★ স্বামীকে প্রাণ খুলে ভালবাসা।
★ স্বামীর সাথে সুমিষ্ট ভাষায় কথা বলা। ঝাঝালো ভাবে না আদব মুহব্বত এর সাথে কথা বলা।
★ স্বামীকে নিজের মনের কথা খুলে বলা। আর সে রকম কোন বিষয় হলে খোলা খুলি ভাবে আলোচনা করা। পরামর্শ করা দুই জনের মধ্যে।
★ স্বামীর সব ধরনের আমানত রক্ষা করা যাতে কোন মতেই নষ্ট না হয়ে যায়।
★ স্বামীর সুখে সুখী আর স্বামীর দুঃখে দুঃখী হওয়া কোন বিষয়ে চিন্তিত হলে তাকে সান্তনা দেয়া।
★ স্বামীর মন জয় কর চলা স্বামী যেটা অপছন্দ করে সেটা না করা।
★ স্বামী অনুমতি ব্যতীত বাড়ি থেকে বের না হওয়া আর স্বামী যাকে অপছন্দ করে তাকে ঘরে প্রবেশ করতে না দেয়া।
★ সংসার চালানোর ক্ষেত্রে স্বামীকে সহযোগিতা করা।
★ বাহিরের থেকে আসলে মিস্টি হাসি হেসে সালাম দেয়া তাকে একটু পানি দেয়া খাওয়া দাওয়া হয়েছে কিনা সব ঠিক আছে কিনা শরীর সুস্থ আছে কিনা।
★ স্বামীর ডাকে সাড়া দেওয়া স্বামী কিছু চাওয়ার আগেই সেটা হাতের কাছে পৌছে দেয়া যাতে কষ্ট না হয়।
★ স্বামীর সম্পদ বাবার বাড়ি বাঅন্যএ পাচার করে না দেওয়া তার অনুমতি ছাড়া।
★ স্বামীর কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাতে সে সুস্থ থাকে তার কাজে বরকত হয়।
★ স্বামীর কোন বদ অভ্যাস থাকলে হেকমতের সাথে তা দূর করা আর সেটা বাহিরে অন্য কাউকে না বলা বা কারোর কাছে প্রকাশ না করা এবং সেটা সুধরে দেয়ার চেস্টা করা।
★ স্বামীকে নিজ অভিভাবক মনে করা।
★ স্বামীর গুণাবলীর প্রশংসা করা।
★ স্বামী কোন কাজে বের হলে হাসিমুখে বিদায় দেওয়া এবং সুস্থ ভাবে যেন ফিরে আসতে পারে তার জন্য আল্লাহ সোবহানাল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা।
★ অল্পেতে সন্তুষ্ট থাকা।
★ স্বামীর জন্য সময়মত খানাপিনা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। স্বামী যে খাবার পছন্দ সেগুলো তৈরি করা।
★ স্বামীর জৈবিক চাহিদা পূরন করা সে ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেয়া।
★ স্বামীর সাথে তরকো বা ঝগড়া না করা।
★ সে যখন বাহিরে যাবে তার আগে তার সকল কিছু গুছুয়ি রাখা।
★ স্বামী বাহিরের থেকে ফিরতে দেরি করলে খোজ খবর নেয়া।
★ স্বামীর দিকে নেক দৃষ্টিতে তাকানো আর এমন কিছু না করা যাতে স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে।

গৃহস্থালীর কাজ সম্পাদনে স্বামীকে সাহায্য করা
ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’র হাদিস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “যখন যুবায়ের রা. আমাকে বিয়ে করলেন, তখন তার কাছে কোন ধন-সম্পদ ছিল না, এমনকি কোন স্থাবর জমি-জমা, দাস-দাসীও ছিল না শুধু কুয়ো থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম।”

একজন গর্ভবতী মহিলার রাতগুলো ইবাদতে এবং দিনগুলো রোজাদার হিসেবে গণ্য করা হয়। একজন গর্ভবতী মহিলার দু' রাকাত নামাজ সাধারণ মহিলার ৮০ রাকাত নামাজ অপেক্ষা উত্তম।

স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকারঃ

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে।

অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস ১১৬২)

১) দেন মোহর।
নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ "তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৪।

২) ভরন পোষণ।
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ "বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।" সূরা তালাকঃ আয়াতঃ ৬৫:৭।

৩) স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা।
স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।” বুখারী।

৪) স্ত্রীর ব্যাপারে আত্ম-মর্যাদাশীল হওয়া।
হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেছেনঃ ‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাচ্ছি না।’ বুখারীঃ ৪৭০৬।

# নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ। আমি তার চেয়ে বেশি আত্মসম্মানবোধ করি,আবার আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি অহমিকা সম্পন্ন।’ মুসলিমঃ ২৭৫৫।

# শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে এসেছেঃ ‘দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ দারামি-৩৩৯৭

# আবুদুল্লাহ ইবনু আমর(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ "পৃথিবীর সবকিছুই ভোগ ও ব্যবহারের সামগ্রী। আর সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট সামগ্রী হচ্ছে দ্বীনদার ও সচ্চরিত্রা স্ত্রী।" মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮৩, নিকাহ অধ্যায়।

বিয়ের পর স্বামীর নামে স্ত্রীর নামকরণ সম্পর্কে কী বলে ইসলাম?


মুসলিম নারীদের অনেকেই বিয়ের পর নিজের নাম পরিবর্তন করে স্বামীর নামকে নিজের নামের অংশ বানিয়ে ফেলে। হাল জামানায় এটি একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যেমন: একজন মেয়ের বাবার দেয়া নাম ফাতেমা। রফিক নামে একজনের সাথে তার বিয়ের পর তার নাম হয়ে যায় মিসেস রফিক বা ফাতেমা রফিক। ইসলামী শরীআর দৃষ্টিতে এটা ঠিক নয়। মুসলিম নারীদের উচিত বিয়ের পরও তার পৈতৃক নাম ঠিক রাখা। কারণ এটা তার একেবারেই নিজস্ব, এখানে স্বামীর কোন শেয়ার নেই। নামই তার বংশ পরিচয় বহন করে। কুরআন বলছে: তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার নামে ডাক। (আল-কুরআন ৩৩:৫)

মহানবী (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে নিজের পিতা ছাড়া অন্যের সাথে সংযুক্ত করে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ) আবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (সাঃ) বলেছেন: যে কেউ নিজের বাবা ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয় সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না, যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ সত্তর বছর হাঁটার রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমাদ) এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেখানে মহানবী (সাঃ) নারীদেরকে তাদের পিতার নামে ডেকেছেন। যখন পবিত্র কুরআনের আয়াত আপনি আপনার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করে দিন (আল-কুরআন, ২৬:২১৪) নাজিল হয়, তখন মহানবী (সাঃ) তাঁর আত্মীয়দের প্রত্যেককে ডেকে ডেকে বলেছিলেন হে অমুকের ছেলে অমুক! আমি পরকালে তোমার কোন উপকার করতে পারব না । হে অমুকের মেয়ে অমুক! আমি কিয়ামতের দিন তোমার কোন কাজে আসব না।

মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এবং অধীনস্থগণ।

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Next