সাহাবী দের ঘটনা শুনলে সত্যি চোখে পানি এসে যায়….।
হযরত সাদ সালামি আল্লাহর নবীর একজন সাহাবী ছিলেন । তিনি অত্যন্ত গরীব সাহাবী ছিলেন।
গায়ের রং ছিল খুবই কালো এবং মুখের মধ্যে ছিল বসন্তের দাগ। একদিন সাদ (রা: ) রাসূলে পাকের দরবারে বসে কাঁদতে ছিলেন।
হুজুর ( সা: ) তাকে কান্না করার কারন জিজ্ঞেস করলেন?
জবাবে সাদ (রা: ) বলতে শুরু করলেন,
ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি আপনার হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছি ৮ মাস হল। এই ৮ মাস আমি মদিনার অলিতে গলিতে কত জায়গায় ঘুরলাম বিয়ের জন্য কিন্ত আমি দেখতে অসুন্দর বলে কেউ আমাকে মেয়ে দেয়না।
আমি আপনার সকল সুন্নাত পালন করতে পারলেও আপনার একটি সুন্নাত বিয়ে যা আমি পালন করতে পারিনি । তাই আমি ভয়ে কান্না করছি যদি এই সুন্নাত না মানার জন্য আল্লাহ্ আমাকে জান্নাত হতে বঞ্চিত করেন।
রাসুল (স: ) সাদকে বললেন এই মদিনার সবচেয়ে ধনী লোক আমর ইবনে ওহাবের মেয়ে মদিনার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের সাথে আমি রাসূল তোমার বিয়ে দিয়ে দিলাম।
এখন তুমি আমর ইবনে ওহাবের বাড়িতে যাও এবং তাকে গিয়ে বল আমি তার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি ।
সাদ (রা: ) আমর ইবনে ওহাবের বাড়িতে গেলেন এবং আমর ইবনে ওহাবকে সব কিছু খুলে বললেন । সাদ (রা: ) এর কথা শুনে আমর ইবনে ওহাব খুব রাগন্নিত হয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ করে বাড়ি হতে বের করে দিলেন।
এদিকে আমর ইবনে ওহাবের মেয়ে ঘরের ভেতর থেকে সব শুনতে পেলেন । যখন আমর ইবনে ওহাব ঘরে ঢুকলেন তার মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা তোমাকে এত বড় সাহস কে দিল যে রাসূলের কথা অমান্য করলেন?
আল্লাহর রাসূল আমার জন্য যে ছেলেকে পছন্দ করেছেন আমিও তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম। মেয়ের কথা শুনে আমর ইবনে ওহাব দৌড়ে রাসূলের দরবারে গেলেন এবং রাসূলের কাছে মাফ চাইলেন।
প্রিয় নবীজী সা. তাকে মাফ করে দিলেন। আর সাদ (রা: ) এর বিয়ের জন্য ৬০০ দিরহাম মোহরানা ধার্য করলেন এবং বললেন এখন তুমি তোমার স্ত্রীর কাছে যাও। কিন্ত সাদ (রা: ) এত গরীব ছিলেন তার পক্ষে ৬০০ দিরহাম জোগাড় করা সম্ভব ছিল না | তাই অন্যান্য সাহাবীরা মিলে সাদ (রা: ) কে সাহায্য করলেন যাতে উনি উনার স্ত্রীর মোহরানা আদায় করেও নতুন বৌয়ের জন্য কিছু সদাই করতে পারেন।
ওদিকে সাদ (রা: ) বাজারে চলে গেলেন কেনাকাটা করার জন্য। যখন নতুন বৌয়ের জন্য কেনাকাটা করতে দোকানে ঢুকলেন হঠাৎ শুনতে পেলেন মদিনার বাজারে কে যেন জিহাদের ডাক দিচ্ছে ? জিহাদের ডাক শুনে সাদ (রা: ) ভাবলেন আমি সাদ ফুলের বিছানা বাসর ঘরে নতুন স্ত্রীর কাছে যাবো না আমি রাসূলের মহব্বতে জিহাদে যাবো । তাই তিনি বিয়ের টাকা খরচ করে যুদ্ধের সরঞ্জাম ক্রয় করে জিহাদে চলে গেলেন।
এদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সাদ (রা: ) একের পর এক
কাফিরকে হত্যা করে জাহান্নামে পাঠাতে লাগলেন। যুদ্ধ করতে করতে এরকম হঠাৎ সাদ (রা: ) শাহাদাতের পেয়ালায় শরবত পান করে শহীদ হয়ে গেলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হল। দূর হতে দেখা যায় কার যেন লাশ পড়ে আছে ? রাসুল (স: ) ও সাহাবীরা কাছে গিয়ে দেখলেন এ যে সাদের লাশ।
মাথার লোহার টুপি ভেঙ্গে মগজ বের হয়ে গেছে আর জিহ্বা বের হয়ে আছে। সাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে রাসূল (স: ) কেঁদে দিলেন আবার পরক্ষণেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং আবার আকাশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। একজন যুবক সাহাবী আবু লুবাবা রাসূলকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
রাসুল (স: ) বললেন আমার সাদ ফুলের বিছানা বাসর ঘরে যায়নি, আমার মহব্বতে শহীদ হয়ে গেল তাই স্নেহের কারণে আমার চোখ হতে পানি ঝড়ে পড়ল। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলাম কারণ আল্লাহ আমার সাদকে খুব সুন্দর একটা মাকাম দান করেছেন আর চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হল আমার সাদ শহীদ হয়েছে তাই আকাশের সব দরজা খুলে গিয়েছে।
বেহেস্ত হতে অসংখ্য হুর দৌড়ে আসতেছে যে কার আগে কে সাদকে কোলে নিবে ? দৌড় দেওয়ার কারণে হুরদের সামনের পর্দা সরে যাচ্ছিলো যা দেখে আমি রাসূল লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
আল্লাহ যেন আমাদের সকলের ওনার মত। ঈমান নিয়া পরকালে যাবার। তৌফিক দান করে সকলে বলি আমিন।
Post a Comment